Tuesday, May 6, 2008

হিল্লা বিয়ে

মাসুদ রানা
৫, মে ২০০৮ সুকুবা, জাপান

হিল্লা বিয়ে


আমার প্রচুর ভূল হয় আর আল্লাহ্‌ সবচেয়ে ভাল জানেন ।


প্রথমে ভেবে দেখেছিলাম, বিয়ে কি ? এবং তালাকও বা কি ? বিয়ে কি এই নিয়ে সবার স্বাভাবিক যা মত আমারও তাই মত । কিন্তু তালাক কি ? স্বামী-স্ত্রী একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া । এবং একটা কথা, ইদানীং মাথায় আসলো, তালাক হলেই যে কারো কিংবা উভয়ের দোষে সেটা হতে হবে তাই না । অনেকক্ষেত্রে এমনও হতে পারে দুজনেই ভাল মানুষ, কিন্তু একজন আরেকজনের টাইপ না । হাসিমুখেও কিন্তু তালাক হতে পারে ।


এইটা আমরা সবাই নিশ্চয়ই জানি, যে ইসলামে মেয়েদেরও ছেলেদের কাছ থেকে তালাক নেয়ার অধিকার আছে । তালাক ছেলেই দেক, আর মেয়েই দেক, কিভাবে দিলে সেইটা তালাক বলে গণ্য হবে, আর কিভাবে দিলে সেইটা হবে না ? মুখে তিন তালাক বললেই কি তালাক হবে নাকি কোর্টের মাধ্যমে সেইটা হতে হবে ? কোরানে তিন তালাকের কথা বলা আছে, তা ঠিক । কিন্তু, রাগের মাথায় একবার তিনবার তালাক বলে ফেললাম আর তালাক হয়ে গেল !?


আগেই বলেছি, তালাকটা হাসিমুখেও হতে পারে । একজনের সাথে আরেকজনের মনের মিল হতে নাও পারে । সেই ক্ষেত্রে আমরা বিচ্ছেদ নিতে পারি । কিন্তু যেন তাড়াহুড়া না করি, ভাবি, আসলেই কি যে কারণে বিচ্ছেদ নিতে চাচ্ছি সেটা ঠিক হচ্ছে, আসলেও কি বিচ্ছেদটা হলে দুজনের জন্যই ভাল হবে ? বদ্‌মেজাজী জিনিসটা যে মোটেই ভাল না সেটা তো আমরা সবাই জানি । বদ্‌মেজাজের কারণে হুট করে মুখে তিন তালাক বলে ফেললাম, আর তালাক হয়ে যাবে ? আমার যেটা মনে হয়, বিচ্ছেদের আগে ভেবে দেখব বারবার । তারপর দুজনে মিলে আলোচনা করে দেখব, জিনিসটা ঠিক হচ্ছে কিনা । আলোচনা করে দেখলাম যে না দুজনের বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়াটাই ভাল । এই সিদ্ধান্ত যখন নিলাম, তখন হচ্ছে এক তালাক । তারপর, আবারো ভাবতে থাকব, যেহেতু বিয়ে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইসলামে । এরকম করে আবারো যখন, সিদ্ধান্ত হবে, না বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়াটাই ভাল, সেটা হবে দুই তালাক । তারপর আবার । এবং একইভাবে তিন বারে তিন তালাক । এবং তখন থেকে আমরা আর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসাথে থাকতে পারব না । তালাকটা হচ্ছে একটা লম্বা প্রসেস এবং অনেক সময় ধরে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপার ।


দুজনের সাথে দুজনের আলাদা হয়ে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে । আমি নিজে অবিবাহিত, হয়তো বিবাহিত জীবনে কি কি সমস্যা হয়, কিছুই জানি না । কিন্তু, আমার মনে হয়, দুজন দুজনের চেয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, ঝগড়া থেকে, সন্তান না হওয়া থেকে, দুজনেই ভাল, কিন্ত মন মানষিকতার ব্যবধান অনেক, কিংবা কোন একটা বড় উদ্দেশ্যের জন্য ইত্যাদি অনেক কারণেই । এমনকি, এও বলা যায়, অনেক পরিবারে আছে, দুজন দুজনকে বছরের পর বছর ধরে সহ্য করতে পারছে না, কিন্তু সমাজের ভয়ে আলাদা হচ্ছে না । আমার তো মনে হয়, এই ক্ষেত্রে তাদের মাঝে বহুবার তালাক হয়ে যায়, যদিও তারা কেউ মখে স্পষ্ট করে উচ্চারণ করে তালাক বলে না কিংবা কোর্টে গিয়ে সাইন করে না ।


যাই হোক, কোরানের সূরা বাকারার ২২১ নম্বর আয়াতে কি ধরণের মেয়ে বিয়ে করা যাবে, তার একটা ঈংগীত দেয়া হয়েছে । বিয়ে এবং তার পরের বিষয় নিয়ে ইংগীত দেয়া আছে তার পরের আয়াতগুলোতে । কিন্তু যেই আয়াতটা আমাদের মনে সন্দেহ্‌র সৃষ্টি করেছে কিংবা আমরা ভুল বুঝেছি সেটা হল, আয়াত নম্বর ২৩০ । আয়াতটা লিখছি,


তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয় বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয় । অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই, যদি আল্লাহ্‌র হুকুম বজায় রাখায় ইচ্ছা থাকে । আর এ হচ্ছে আল্লাহ্‌ কতৃক নির্ধারিত সীমা, যারা উপলদ্ধী করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয় । (২,২৩০)


এবার আসা যাক, আমরা হিল্লা বিয়ে সম্পর্কে কি জানি ? রাগের মাথায় বা বদ্‌মেজাজের কারণে, মুখে উচ্চারণ করল, এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক । ব্যস, তালাক হয়ে গেল !? আমি আগেই বলেছি, আমার কাছে কোন জিনিসটাকে তালাক মনে হয় । আমার কাছে, এইটা তালাকই না । কাজেই হিল্লা বিয়ের হওয়ার প্রশ্নই উঠে না । এরপর, পরের অংশ ব্যখ্যা করার জন্য ধরে নিলাম, এভাবে তালাক হয়ে গেল । প্রথমে, আমাদের সমাজে ঐ মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয়, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিংবা ধর্মের ভয় দেখিয়ে । এই বিয়ে তো বিয়েই না । কোন মেয়ে কিংবা কোন ছেলে খুশি মনে নিজে থেকে বিয়েতে রাজী না থাকলে সেই বিয়ে বিয়েই না । কাজেই আমাদের যে হিল্লা বিয়ে দেয়া হয়, সেটা তো বিয়েই না ! তারপর যে ছেলের সাথে বিয়ে দেয়া হয়, তার উদ্দেশ্যই থাকে শারীরিক সম্পর্ক বিষয়ক । এইটা তো পতিতালয়ে যাওয়ার সমান । আর ঐ ছেলে যদি, ঐ উদ্দেশ্যে বিয়েটা না করে বিয়ের উদ্দেশ্যেই করে এবং মেয়েটাও যদি রাজী থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই তারা ১ মাস, ২ মাস পরে তালাক নিয়ে নিবে না ! কারণ, তারা দুজন দুজনকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে । কাজেই এই দিক দিয়ে ভাবলেও হিল্লা বিয়ে জিনিসটার অস্তিত্ব নেই । আর যে বিয়ে করাই হবে, বিয়ে ভেঙ্গে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে সেটা কি বিয়ে ??


তাহলে দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিলে প্রথম স্বামীর সাথে বিয়ে হতে পারবে, এর অর্থ কি, যেটা কোরানে আছে । ঐ বাক্যটার অর্থ হচ্ছে শুধু ঐ জায়গায় যে, একই মানুষের সাথে দ্বিতীয়বার বিয়ে হওয়াতে কোন সমস্যা নেই । শুধু এইটাই । একটা ঊদাহরণ দিয়ে বলি । ধরলাম, প্রথম স্বামীর সাথে বিয়ে ভেঙ্গেছে দশ বছর আগে । এর মাঝে সুখে শান্তিতে দ্বিতীয় স্বামীর সাথে একটা মেয়ে ঘর করল এই দশ বছর । ধরলাম, দ্বিতীয় স্বামী মারা গেল, কিংবা কোন কারণে তাদের বিয়েটা ভেঙ্গে গেল । তখন দেখল যে, প্রথম স্বামীর সাথে যে কারণে তালাক হয়েছিল সে সমস্যাটা আর নেই, আবার বিয়ে করা যায় । তখন হয়তো অনেকে বলতে পারে, এর সাথে না তোমার একবার বিয়ে হয়েছিল, না আর বিয়ে হওয়া যাবে না । এই কথা বা এই নিয়ম যেন কেউ না করে, আমার মনে হয় সেই আয়াতটার অর্থ সেটাই ।

ঐ আয়াতের অর্থ এই না যে, একজন হুট করে তিনবার তালাক ঊচ্চারণ করল, তাতে তালাক হয়ে গেল এবং তারপর ১ সপ্তাহ্‌ বা ১ মাস, অন্য একজনের সাথে নামের বিয়েতে একসাথে থাকল তারপর আবার পুরাতন জনের কাছে ফিরে আসল । কারণ, আমরা যদি বিয়ে কি, তালাক কি, কখন কিভাবে তালাক হয় ঐ জিনিসটা বুঝি, তাহলে কিভাবে বলি, আমরা যাকে হিল্লা বিয়ে বলি সেটার অস্তিত্ব ইসলামে আছে ?!

4 comments:

  1. আসসালামু আলাইকুম।
    সুন্দর লেখা। তালাক সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের সূরা তালাক পড়তে হবে। চিন্তা করা যায়, কুর'আনে পুরো একটা সূরা আছে এর উপরে অথচ আমরা সন্দেহ আর অজ্ঞতার মধ্যে থাকি। সূরা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে প্রতিটা তালাকের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমার কথা। সেই সাথে দুই জন সাক্ষ্মীর কথাও বলা আছে। শুধু তাই না, আরো অনেক দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। আমার খুব জানার ইচ্ছে যে, আমাদের দেশে তিন তালাক প্রথার এবং হিল্লা বিয়ের ওই প্রথা কিভাবে চালু হল।

    ReplyDelete
  2. খুবই চিন্তাশীল লেখা। আশা করি যারা ইসলামের চার বিয়ে , হিল্লা বিয়ে ইত্যাদি নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করতে চায় অথবা নিজেরাই একটু বিব্রান্ত তাদের বুঝতে সাহায্য করবে। কুরআন আল্লাহর বানী, এই পৃথিবীর অস্ত্বিস্ত থাকতে তাতে সামান্যতম ভূল থাকা সম্ভব না। মানুষের নলেজ খুবই সীমিত। কুরাআনের পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা আরব ভাষাভাষিদেরও পরিপূর্ণভাবে জানা সম্ভব না।

    ReplyDelete
  3. How do you know that Talaq out of anger is not to be counted as? Is there any reference in quran or sahih hadith that, a precondition for an acceptable Talaq is that it should not be out of anger? So far I know there is not. It's an invention of our feminist pressure groups and it's a law made by our government (Bangladesh).

    In fact, you have to take responsibility for your actions whether or not you do it out of anger. You murder a person out of anger, and according to your logic above, it should not be counted as a murder!!!? Come on.!!

    The gist here is, Whether VERBAL Talaq is to be counted. If it is, then it must be counted even if you are angry or not.

    Another thing is that, is there any precondition for marrying, that you cannot marry someone with an intention of divorcing after a certain period. Do you have any reference from quranic or hadithic marriage law for that? If not, hilla marriage is just fine with quranic law.

    Iqram

    ReplyDelete
  4. Iqram,
    Pease read sura Talaq and other chapters of the Qur'an to judge. Some points for the divorce :
    1. Fixed periods for counting.
    2. Two witnessed from among the husband and wife.

    So, it is clear that counting talaq three times at a time does not validate the talaq. Talaq is not a "Chele khela". It should be decided though a long process and both should have the fear that once they have divorced they have no right to marry again untill they get divorced again. It is just ignorance to create something like "Hilla Marriage". Please think carefully and accoriding to the teachings of Quran.

    Thank you.

    Mahfuz

    ReplyDelete