Sunday, March 30, 2008

লা ইলাহ্‌ ইল্লাল্লাহ্‌

লা ইলাহ্‌ ইল্লাল্লাহ্‌
মাসুদ রানা
টোকিও, জাপান

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ । এর অর্থ কি ? বাংলা ভাষায় অনুবাদ করলে এর অর্থ দাঁড়ায়, আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, কিংবা আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন প্রভু নেই, কিংবা আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ্‌ নাই । আরবী লা মানে হচ্ছে না । ইল্লাল্লাহ্‌ মানে হচ্ছে আল্লাহ্‌ ছাড়া । ইলাহ্‌ মানে হচ্ছে প্রভু বা মাবুদ । কেউ কেউ এটাকে আর বাংলাতে অনুবাদ করেন না, ইলাহ্‌ শব্দটাই ব্যবহার করেন। কিন্তু, ইলাহ্‌-ই বলি বা প্রভুই বলি কিংবা মাবুদই বলি জিনিসটা আসলে কি ?

আমরা যেই ভুলটা প্রথমেই করি তা হলো, আমরা মনে করে বসে থাকি যে ইলাহ্‌ হচ্ছে কোন সৃষ্টিকর্তা । অর্থাৎ আমরা মসুলমানেরা যেহেতু মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে, একমাত্র আল্লাহ্‌ ই হচ্ছেন সমস্ত বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা, তাই আমরা মুসলমানেরা সেফ, জান্নাতে তো যাচ্ছিই, ওয়াও ! আমরা আবার অনেক সময় এও মনে করি যে, ইলাহ্‌ জিনিসটা হচ্ছে আল্লাহ্‌ জাতীয় কোন জিনিস বা ব্যক্তি জাতীয় কোন জিনিস । আসলে, ইলাহ্‌ জিনিসটা কি, সত্যি কথা বলতে এই কিছুদিন আগ পর্যন্তও বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না ।

ইলাহ্‌ হচ্ছে এমন একটা কিছু যার কাছে আমরা নিজেকে সঁপে দিব । যেই জিনিসের উপর আমরা আস্থা করব । যেই জিনিসের কাছ থেকে আমরা কোন কিছু আশা করব । যেই জিনিস আমাদেরকে কিছু দেয়ায় সামর্থ্য রাখে বলে মনে প্রাণে বিশ্বাস করব । যেই জিনিস আমাদের জন্য কি ভাল তা ঠিক করে দেবে । যেই জিনিস হবে আমাদের সকল সুখ এবং আনন্দের উত্‌স । যেই জিনিসকে আমরা সবচেয়ে বেশি ভালবাসব । এবং আমরা মুসলমানদের বিশ্বাস, এই যেই জিনিসটা হচ্ছে আর কিছুই না, একমাত্র আল্লাহ্‌। এবং যে মানুষ আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কোন কিছুকে সেই জিনিসটা বলে মনে করবে সেই শিরক করলো । এখন দেখা যাক, আমরা মুসলমানেরা আসলে কি করছি ?

সম্পর্ক আছে বলে একটু বলা ভাল বলে মনে করছি । ঊদাহরণ হিসেবে একজন ফেল করা ছাত্রকে ধরা যাক । ধরলাম গণিত পরীক্ষায় সে ফেল করেছে । কারণ আর কি হতে পারে, সে পড়াশোনা করেনি, তাই ফেল করেছে । তবে সে কিন্তু জানত যে, সে যদি পড়াশোনা না করে তাহলে ফেল করবে । যদিও সে জানত যে পড়াশোনা করাটা দরকার, না করলে ফেল করবে এইটা তার দৃঢ় বিশ্বাস । ক্লাশে যে ফার্ষ্ট হয়েছে সে যেরকম বিশ্বাস করে যে পড়াশোনা করতে হবে, ঐ ফেল করা ছাত্রটাও কিন্তু একই কথা একইভাবে বিশ্বাস করে । তাহলে দুইজনের মাঝে তফাত্‌টা কোথায় ? তফাত্‌টা সহজ । একজন বিশ্বাস করেছে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেছে, আরেকজন সেইটা করেনি । এখন রেজাল্ট বের হওয়ার পর সেই ফেল করা ছাত্রটা যদি শিক্ষকের কাছে গিয়ে বলে, স্যার, আমি ১০০% বিশ্বাস করতাম যে, পড়াশোনাটা করা দরকার এবং এটা সত্যি । তাহলে কি বলা যাবে যে, সেই শিক্ষক কি তাকে পাশ করিয়ে দিবে ? ইসলামের বিশ্বাসটাও আমার কাছে ঠিক সেরকমই মনে হয় । শুধু বিশ্বাস করলাম আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন ইলাহ্‌ নেই, কিন্তু যে কাজগুলো করে আমরা নিয়মিতই শিরক করছি বা আল্লাহ্‌র পাশে অন্য কাউকে বসাচ্ছি বা অন্য কোন জিনিসকে বছাচ্ছি, তাহলে কি আমরা বলবো যে আমরা পাশ করব ?

সত্যি কথা বলতে কি এই ইলাহ্‌ শব্দটা এত ব্যপক যে এইটা নিয়ে অনেক গবেষণা করার জিনিস আছে । আর আমাদের মুসলমানদের কি হয়েছে ? যেই বাক্যটাকে আমরা ঈমানের একদম মূল ভিত্তি বলি, সেই বাক্যটার অর্থ না বুঝে জীবনটা পার করে দেই, আফসোস !

ঊদাহরণ দিয়ে ইলাহ্‌ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর ব্যাখ্যা করে দেখা যাক । এইখানে একটা কথা বলে রাখি, যেই মূহুর্তে আমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ এর সীমারেখা পার করছি সেই মূহুর্তে আমরা শির্‌ক করছি । তবে আমি যা বলতে চাচ্ছি, তা বোঝার জন্য বোঝার মন নিয়ে পড়া উচিত, কারণ এই ব্যপারটা খুবই দরকারী, সত্যি বলতে বেসিকের ও বেসিক ।

আমাদের জীবনের অন্যতম প্রধান একটা ইলাহ্‌ হচ্ছে টাকা । জীবনের সুখের জন্য কি দরকার, খুবই সহজ ঊত্তর টাকা । তার মানে হচ্ছে, আমরা বিশ্বাস করে বসে আছি, টাকা থাকলে আমরা সুখে থাকতে পারব । আমরা বিশ্বাস করে বসে আছি, টাকা থাকলে কি না করা যায় । মানিব্যাগ এ টাকা থাকলে চৈত্রের গরমেও ঠান্ডা লাগে, মাঘের শীতেও গরম লাগে । আমরা ভাবছি, টাকা আমাদের সব দিতে পারে । যেই মূহুর্তে আমরা টাকার কাছ থেকে সুখ পেতে চাচ্ছি, সেই মূহুর্তে আমরা লা ইলাহ ইল্লাল্লাহ্‌ লংঘন করছি, আমরা শির্‌ক করছি । আমি কখনো বলতে চাচ্ছি না টাকার দরকার নেই । দুনিযায় এক নম্বর ধনী যদি কোন মুসলমান হয়, আমার তাতে কোন আপত্তিই নেই । বরঞ্চ আমাদের দেশের তথাকথিত ধার্মিকেরা যখন টাকার প্রতি অনীহা প্রকাশ করে আলসেমি করে, নিজের জীবনে উন্নতি আনার কোন চেষ্টাও করে না, তখন আমার বিশ্বাস সেইটা মোটেও ইসলাম এর শিক্ষা না । সবার কাছে আমার হাতজোর করে একটা অনুরোধ, তথাকথিত মুসলমানের কি করছে তা দিয়ে ইসলামের মত এত চমত্‌কার একটা জিনিসকে বিচার যেন না করি । ইসলামকে যদি বিচার করতেই হয়, কুর্‌আনের কাছে ফিরে যেতে হবে ।

ইলাহ্‌ যে শুধু কোন বস্তুগত জিনিস হবে এমন অবশ্যই না । ইলাহ্‌ হতে পারে । মানুষের চিন্তাধারা, কোন আইডিয়া, পরসমালোচনা কে ভয় করা ইত্যাদি । যদি আমরা সুদ দেই অথবা নিই, তাহলে আল্লাহ্‌র কাছে আমরা অপরাধী হব । কারণ, সুদ দিতে অথবা নিতে আল্লাহ্‌ কুর্‌আনে সরাসরি নিষেধ করেছেন । কিন্তু আমরা যদি বলতে থাকি, আরে ধুর, সুদ ছাড়া হয় নাকি । সুদ ছাড়া আধুনিক অর্থনীতি চিন্তাই করা যায় না । কিংবা ১০ বছর পর ছেলেমেয়ের বিয়ের জন্য ডিপিএস করে টাকা জমাই, মানে সুদ নিই, এবং ভাবতে থাকি, এরকম না করলে ছেলেমেয়ের বিয়ে বা পড়াশোনা হবে কিভাবে ? তাহলে আমরা আসলে সরাসরি আল্লাহ্‌কে চ্যালেঞ্জ করছি । আল্লাহ্‌, যে সব কিছু সৃষ্টি করেছেন, এই মহাবিশ্বের সবকিছুই যার, তিনি যখন আমাদেরই ভালোর জন্য সুদ নিতে বা দিতে নিষেধ করেছেন, তখন আমরা বলছি, সুদ ছাড়া ব্যাংকিং এর কথা ভাবতেই পারছি না । আমরা এত অহংকারী যে, আল্লাহ্‌ সরাসরি আমাদেরকে একটা জিনিস করতে না করছেন, আর আমরা বলছি ধুর, সুদ ছাড়া চলে নাকি । এইখানে আমরা এইযে সুদ ছাড়া চলে নাকি, এই আইডিয়াকে ইলাহ্‌ হিসেবে গ্রহণ করছি এবং শির্‌ক করছি । এইখানে একটু খেয়াল করো, যখন আমরা কুর্‌আনের শিক্ষাটাকে মেনে নিচ্ছি, কিন্তু যেই কারণেই হোক, ভুল করে সুদ নিচ্ছি বা দিচ্ছি, এবং বিশ্বাস করছি যে এটা খারাপ, তখন আমরা অপরাধ করছি, কিন্তু শির্‌ক করছি না । কিন্তু যখন আল্লাহ্‌র দেয়া আইডিয়াকে আমরা পাত্তাই দিচ্ছি না, সুদের ঊপর ভিত্তি করে অর্থনীতিটাকে গড়ে তুলছি, তখন আমরা শির্‌ক করছি ।

এই একই ধরণের চিন্তাভাবনা অনেক ক্ষেত্রেই করা যায় । আল্লাহ্‌ সরাসরি আমাদেরকে হিজাব করতে বলেছেন । আমরা যদি না করি, সেইটা আমাদের অপরাধ । কিন্তু আমরা যদি বলি এবং ভাবতে শুরু করি যে, আরে কিসের হিজাব, কোন দরকারীই নাই । সেইক্ষেত্রে আমরা শির্‌ক করছি । অনেকক্ষেত্রে, অত্যধিক ভালবাসাকেও ইলাহ্‌ বলা যায় । অনেকক্ষেত্রে আমরা কোন মেয়ের প্রেমে দেবদাস হয়ে যাই । বলে থাকি, ও যদি না থাকে, তাহলে জীবনটা রেখে আর কি হবে ? একটা মেয়ের জন্য এই চমত্‌কার জীবনটা অর্থহীন মনে হওয়ার যেই আইডিয়াটা সেই আইডিয়াটাও ইলাহ্‌ এবং আমরা যখন এই ইলাহ্‌কে গ্রহণ করছি, তখন আমরা শির্‌ক করছি ।

এমনকি মানুষের ষ্ট্যাটাসটাকেও অনেক সময় ইলাহ্‌ বলা যায় । ষ্ট্যাটাসটা অনেকটা টাকার মতোই কাজ করে । আমরা মনে করি, ষ্ট্যাটাস আমাদের সন্মান বৃদ্ধি করবে । কিছু কিছু অজ্ঞ মানুষ হয়তো টাকা বা ষ্ট্যাটাসের উপর অন্য মানুষকে বিচার করে থাকে এবং যাদের টাকা বা ষ্ট্যাটাস আছে, তারা হয়তো মাঝে মাঝে তাদের কাছ থেকে সন্মান পেয়ে থাকে, কিন্তু কোন মানুষটা কোন অজ্ঞের কাছ থেকে সন্মান পেয়ে খুশী হতে চায় !

এবং ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে সবচেয়ে ভয়ানক যেটা মনে হয়, সেটা হল, লোকে কি ভাববে, সেটা ভাবা । কিংবা আরে সবাই করে আমি না করলে, কেমন দেখা যায় । লোকে কি ভাববে সেইটা ভাবা যে একদমই ভুল, আমি সেটা বলছি না । কিন্তু আল্লাহ্‌ যখন একটা জিনিস করতে বলছেন, তখন পাছে লোকে কিছু ভাবে এর ভয়ে আল্লাহ্‌ এর আদেশ পালন না করাটা হচ্ছে শির্‌ক । এই ক্ষেত্রে নামাযের উদাহরণটা দেয়া যায় । ধরা যাক, আমি কোন গেদারিং এ আছি । সেখানে কেউ নামায পড়ছে না । আমি সাধারণত নামায পড়ি । এখন তাদের কেউ পড়ছে না বলে যদি আমি মনে করি যে, তারা কি ভাববে ? এবং সেই কারণে, তারা কি ভাববে এই জিনিসটার কারণে যদি আমি তখন আল্লাহ্‌র আদেশ নামায না পড়ি, তাহলে আমি তখন আল্লাহ্‌র সাথে অন্যদের ভাবনাকে শরীক করছি । ঠিক বিপরীত জিনিসটাও বলা যায় । ধরি, আমি ঠিকমত নামায পড়ি না । এবং ধরলাম আজকে দুপুরে আমার নামায পড়ার কোন ইচ্ছা ছিল না । কিন্তু আমার কয়েকজন বন্ধু এসে আমাকে নামাযের জন্য ডাকল । আমার ইচ্ছা ছিল না, অথচ তাদের ডাকের জন্য বা তারা কি ভাববে, সেই কারণে নামায পড়লাম । তাহলে আমি শির্‌ক করলাম । এই ক্ষেত্রে আমি নামাযটা পড়েও শির্‌ক করলাম । কারণ, এই নামাযটা আমি আল্লাহ্‌র জন্য না, ঐ বন্ধুদের জন্য বা তাদেরকে দেখানোর জন্য পড়েছি । এই ক্ষেত্রে আমি যদি নামাযটা না পড়তাম, তাহলে অপরাধ করতাম, কিন্তু শির্‌ক তো করতাম না ।

কাজেই ইলাহ্‌ হতে পারে কোন মূর্তি, মানুষের কথার বা সমালোচনার ভয়, টাকা, স্ট্যাটাস, কোন আইডিয়া যেখানে আল্লাহ্‌র আদেশের অমান্য করা হয় ইত্যাদি অনেক কিছুই । ইবাদত করা(to worship) করা বলতে আমাদের অনেকেরই ধারণাটা পরিষ্কার না । এই নিয়ে একটা হাদীস বলি, তাহলে হয়তো ইবাদতের অর্থটা কিছুটা পরিষ্কার হবে । একজন লোক খ্রীষ্টান থেকে মুসলমান হয়েছিল । কোন এক কথার সাপেক্ষে সে একবার বলেছিল, হে রাসুলুল্লাহ্‌, আমরা তো আমাদের যাজকদের ইবাদত করতাম না । তখন রাসুলুল্লাহ্‌ বলেছিলেন, তোমরা কি এমন কিছু করতে না যা আল্লাহ্‌ না করেছে এবং যাজকেরা হ্যাঁ করেছে এবং তোমরা যাজকদের মান্য করেছ । আবার তোমরা কি এমন কিছু কর নি যেটা আল্লাহ্‌ হারাম করেছে এবং তারা(যাজকেরা) হালাল করেছে এবং তোমরা সেইটা হালাল হিসেবে মেনে নিয়েছ । তখন লোকটা বলল, হে রাসুলুল্লাহ্‌ আমরা তা করতাম । তখন রাসুলুল্লাহ্‌ বললেন, এভাবেই তোমরা সেই যাজকদের পূজা বা ইবাদত করতে । আর এভাবেই তারা আল্লাহ্‌র সাথে সেই যাজকদের শির্‌ক করত ।

আমরা মুসলমানেও যদি ভেবে দেখি, তাহলে আমরাও প্রতিনিয়ত শির্‌ক করে যাচ্ছি অর্থাৎ, লা ইলাহ্‌ ইল্লাল্লাহ্‌ ভঙ্গ করে যাচ্ছি । শুধু অমুসলিমরাই যে, লা ইলাহ্‌ ইল্লাল্লাহ্‌ মানে না তা না, আমরাও তা করি ! আল্লাহ্‌ আমাদের সঠিক পথ দেখান । আমীন ।

Friday, March 21, 2008

ঈমান কেন প্রয়োজনীয়?


পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

ঈমান আনা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? বর্তমানে অনেকেই বলে যে, এই সব ধর্ম বা স্রষ্টায় বিশ্বাস এর কোন প্রয়োজন নেই। আমরা ভাল কাজ করলেই তো হয়। তারা নতুন এক ধর্মের কথা বলে যার নাম হল মানবধর্ম। মানবধর্ম কি? মানুষ হল সবকিছুর উপরে। Ethics এর এক ক্লাশে বিভিন্ন মনীষীর দেয়া Ethics এর সংজ্ঞা পড়ানো হচ্ছিল। এক মনীষীর মতে, মানুষের মূল্য হচ্ছে পরম। মানুষের উপকারে আসে এরকম সব কাজই হচ্ছে নৈতিক কাজ। খুবি চমৎকার। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এ ধরনের তত্ত্ব জেনেও কারো চরিত্রের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। Ethics এর ক্লাশ করে একজনের চরিত্র বদলে গেছে এরকম মানুষ আমি পাই নি। একেবারে গোড়াতে আমাদের মৌলিক কিছু সমস্যার সমাধান না করা পর্যন্ত আমাদের চরিত্র বদলাবে না। একজন মানুষের জীবনের লক্ষ্য কি তার উপর নির্ভর করে তার নীতি কিভাবে নির্ধারিত হবে। কাজেই আমাদের জীবনের লক্ষ্যকে সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে। জীবনের লক্ষ্যকে সঠিকভাবে নির্ধারণ করাটাই হল ঈমান আনা।

ঈমান মানে কি শুধু বিশ্বাস? আমার কাছে তা মনে হয় না। কারন শুধু বিশ্বাস করাটাই যদি ঈমান হয়, তাহলে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই মুমিন। কিন্তু মুমিন হওয়া কি এত সহজ? একবার কিছু সাহাবী ইসলামে প্রবেশ করে নিজেদের মুমিন বলছিলেন। তখন তাদেরকে বলা হল যে, তোমরা নিজেদেরকে মুমিন বল না, বল যে তোমরা ইসলামে প্রবেশ করেছ। আরো কিছু উদাহরন দেখা যাক। ফিরআউন কি মুমিন? ফিরআউন কিন্তু আল্লাহকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করত। শয়তান কি মুমিন? কোন সাধারন মানুষের শয়তানের থেকে বেশি আল্লাহর উপর বিশ্বাস নেই। তারপরও শয়তান মুমিন না। তাহলে ঈমান আনা বলতে আসলে কি বুঝায়? এ ব্যাপারে পরিষ্কার জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। আমি নিজেও এখনও এ ব্যাপারে পুরোপুরি জ্ঞান অর্জন করতে পারি নি। এখানে আমি এ পর্যন্ত যা বুঝে এসেছি তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব।

একজন মানুষ যখন জন্মগ্রহণ করে, তখন তার ভিতরে ভালবাসা, দয়া, উদারতা, সদয়ভাব, সৌজন্যবোধ ইত্যাদি গুনাবলীগুলোর বীজ বপণ করা হয়ে থাকে। এ গুণগুলো প্রত্যেক মানুষের ভিতর সহজাত ভাবে থাকে। অর্থাৎ একটি শিশুর জন্ম নেওয়া মানে একটি গাছের চারা রোপিত হওয়া। এখন এই চারাটাকে বিকশিত করতে হবে। এই পৃথিবী হল সেই চারার বিকশিত হবার মাধ্যম। কোন মানুষ যত বেশি ভালবাসা, দয়া, উদারতা ইত্যাদি সদগুণগুলো অনুশীলন করবে তার সেই চারাটা তত বেশি বিকশিত হবে, সুস্থ-সবলভাবে বড় হবে। আর সে যদি তার উল্টোতা করে, অর্থাৎ অন্যায়, অত্যাচার করে তাহলে সে সেই চারাটাকে ধ্বংস করে। কুরআনে আল্লাহ বারবার বলছেন যে, তোমরা তোমাদের আত্মার জন্য ভাল কাজ পাঠাও। তিনি আরো বলছেন, তোমরা যদি অন্যায় কর, জুলুম কর তাহলে তোমরা আল্লাহ বা অন্য কারোর কোন ক্ষতি করবে না, বরং তোমরা তোমাদের নিজেদেরই ক্ষতি করবে। আল্লাহ বলছেন, তোমরা তোমাদের আত্মার প্রতি জুলুম কর না, তোমাদের আত্মাকে ধ্বংস করো না। কুরআনে আল্লাহ খুব চমৎকার একটা রূপক ব্যবহার করেছেন। সেটি হল এরকম যে, তারা যখন কোন অন্যায়-অত্যাচার, খারাপ কাজ করে, তখন তাদের আত্মার অবস্থা হয় এরকম যেন একটি টর্নেডো এসে একটি শস্যক্ষেত্রকে লন্ডভন্ড করে গেল। আরেকটি চমৎকার রূপক আছে কুরআনে। উর্বর ভূমি থেকে বিভিন্ন ধরনের শস্য বের হয়ে আসে। কিন্তু অনূর্বর ভূমি থেকে তেমন কিছুই বের হয়ে আসে না। আমাদের আত্মার অবস্থা হবে অনেকটা এরকম। কাজেই আমাদের ভিতর চমৎকার সব গুণাবলীগুলোর সুপ্ত যে প্রতিভা আছে তাকে লালন করে বিকশিত করা হচ্ছে এই পৃথিবীর জীবনের উদ্দেশ্য।

এবার একটা ব্যাপার চিন্তা করে দেখি। যে সব গুণাবলীর কথা বলা হল সেগুলোর সবচেয়ে বেশি ধারক কে? কার কাছে এই গুণগুলো সবচেয়ে বেশি আছে? কার এই গুণাবলীগুলো নিখুঁত এবং অসীম? তিনি আল্লাহ! আমরা যদি এই গুণগুলোকে বিকশিত করতে চাই তাহলে আমাদেরকে টার্গেট করতে হবে আল্লাহকে, কোন মানুষ বা শয়তান বা কোন বস্তুকে নয়। আল্লাহকে অনুসরন করতে হবে। আল্লাহ মানুষকে তার অবয়বে তৈরি করেছেন এই অর্থে যে, আমরা আল্লাহর অসীম সব গুণাবলীগুলোকে শেয়ার করতে পারব, আয়ত্ব করতে পারব। আল্লাহর এই গুণাবলীগুলোকে অর্জন করে আমরা আল্লাহর কাছাকাছি যেতে পারব। এই ক্ষমতা আমাদের ভিতরে দিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা আল্লাহর প্রতিনিধি। এখন আমাদের সহজাত এই প্রবৃত্তিকে আমরা মেনে নেব কি নেব না? আমরা কি আমাদেরকে গড়ে তুলব না আমাদেরকে ধ্বংস করব?

এবার ঈমান নিয়ে চিন্তা করা যাক। ঈমান এর বিপরীত হল কুফর। কাফারা করা মানে হল অবিশ্বাস করা, অস্বীকার করা, অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ইত্যাদি। ঈমান আনা হল বিশ্বাস করা, স্বীকার করা, বিশ্বস্ততা প্রকাশ করা। আমি এটাকে এভাবে দেখি। ঈমান আনা হল আমাদের যে সহজাত প্রবৃত্তি আছে তাকে স্বীকার করা, আমাদের উপর যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যে আমানত দেয়া হয়েছে সেটাকে রক্ষা করার অঙ্গীকার করা, আমাদের ধ্যান-জ্ঞানকে আল্লাহমুখী করা, আল্লাহকে আমাদের জীবনের লক্ষ্য করা, আমাদের এবং আল্লাহর মাঝা সরল রাস্তা তৈরি করা, আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়া। আর ঈমানের বহি:প্রকাশকে আমি বলি ইবাদাত।

এবার ঈমানের প্রভাব নিয়ে চিন্তা করা যাক। একজন মানুষ যদি তার দৃষ্টিকে শুধু তার নিজের ভিতর সীমাবদ্ধ রাখে, তাহলে তার সচেতনতা, সজ্ঞানতা থাকে অনেক সীমিত। সে তখন নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই বুঝে না। সে নিজেকে একটি সীমিত গন্ডির ভিতর আবদ্ধ করে রাখে। লোভ-লালসা, অহংকার ইত্যাদি শৃঙ্খল দ্বারা নিজেকে বেধে রাখে। তার অবস্থা হয় অনেকটা এরকম যে সে দেখেও দেখতে পারে না, শুনেও শুনতে পারে না। আল্লাহ তাদের কথা বলছেন যে, তারা বধির, বোবা এবং অন্ধ। সে এই পৃথিবীর জাকজমক দেখে প্রতারিত হবে, সে থাকে প্রচন্ডরকমের এক ধোঁকার ভিতরে। এখন কেউ যদি তার দৃষ্টিকে এই শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে আল্লাহর দিকে নিয়ে যায় তাহলে তার সচেতনতা, সজ্ঞানতা হবে অনেক বিস্তারিত। সে তখন সবকিছু দেখার, বুঝার, শোনার চেষ্টা করবে। সে যখন আল্লাহর বিভিন্ন গুণাবলীগুলো চিন্তা করবে এবং সেগুলোকে নিজের ভিতরে গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। তার ভালবাসা, দয়া, উদারতা, সৌজন্যবোধ তখন শুধু নিজের এবং তার আশেপাশের গুটিকয়েক মানুষ বা বস্তুর ভিতর সীমাবদ্ধ থাকবে না। তার ভালবাসা হবে সুদূর প্রসারিত। সে সবাইকে সমানভাবে ভালবাসবে, সবার প্রতি দয়া দেখাবে। শুধু তার পরিবার ও আত্মীয়দের প্রতি না, শুধু মানুষের প্রতি না, সমগ্র সৃষ্টির প্রতি তার ভালবাসা, দয়া, উদারতা ইত্যাদি প্রসারিত হবে। আল্লাহর জন্য অন্যকে ভালবাসা বলতে আমি এটাকেই বুঝি। এবার সূরা ফাতিহার প্রথম পাঁচটি আয়াতের প্রতি মনোযোগ দেয়া যাক।

পরম দয়ালু ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
১। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিজগৎসমূহের রব(পালনকর্তা)।
২। তিনি পরম দয়ালু ও অসীম করুনাময়।
৩। তিনি বিচারদিবসের মালিক।
৪। আমরা শুধু তোমার ইবাদাত করি এবং তোমার কাছে সাহায্য চাই।
৫। আমাদেরকে সহজ-সরল পথে ধাবিত কর।

প্রথম ৩ আয়াতে আল্লাহর ৩ ধরনের গুণাবলীর কথা বলা হয়েছে। এই ৩ ধরনের গুণাবলী হচ্ছে প্রধান এবং এগুলো থেকে অন্যান্য গুণাবলীগুলো চলে আসে। প্রথম গুণ হল, পালনকর্তা। যে ঈমান এনেছে, সে নিজেকে পালনকর্তা হিসেবে গড়ে তুলবে। সে তার আশেপাশের মানুষ, বস্তু, পশু-পাখি, গাছপালা সবাইকে প্রতিপালন করার চেষ্টা করবে। সবাইকে সে যত্ন করবে। দ্বিতীয় গুণ হল, দয়ালু ও করুনাময়। একজন মুমিন হবে সবার প্রতি দয়ালু ও করুনাময়। তৃতীয় গুণ হল, বিচারের মালিক। একজন মুমিন বিচারের ক্ষেত্রে হবে আপোসহীন, সুবিচারের প্রতি থাকবে সে কঠোর যদিও তা তার নিকট আত্মীয়ের বিরুদ্ধে হয়। ৪র্থ আয়াত হল আমরা শুধু আল্লাহকে অনুসরন করব, আল্লাহর দিকে নিজেদের ধাবিত করব, আল্লাহকে আমাদের সামনে রাখব এবং তার কাছে সাহায্য চাব। আর ৫ম আয়াত হল আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। উপরে গুণাবলীগুলো আমরা আল্লাহর সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে, আল্লাহকে অনুসরন করে অর্জন করব এবং এভাবে আমরা আল্লাহর কাছে যাওয়ার রাস্তায় নিজেকে নিয়ে যাব। কত চমৎকার এই সূরা! প্রতিদিন কমপক্ষে ১৭ বার এটিকে স্মরণ করলে আর কিছুর কি প্রয়োজন আছে?

কুরআনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একজন মুমিন নিজেকে এমন এক অবস্থায় নিয়ে যায় যে, সে তখন অন্যের জন্য তাই ভালবাসে যা সে নিজের জন্য ভালবাসে। নিচের ঘটনাটা খেয়াল করি।

ঘটনা: এক সাহাবী তার সঙ্গীসহ বাজারে গিয়েছেন। সে এক দোকানের সামনে গিয়ে একটা জিনিসের দাম জিজ্ঞাসা করল। দোকানদার তাকে বলল যে, জিনিসটার দাম ৫ দিরহাম। সাহাবী তখন কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল যে, আমাকে এটি ৭ দিরহামে দিবেন? দোকানদার বলল যে, অবশ্যই দিব, আমি তো এটাকে ৫ দিরহাম দিয়েই দিতে চাই। তখন সাহাবী আরো কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল যে, এটা আমাকে ৮ দিরহামে দিবেন? দোকানদার তাকে একি উত্তর দিলেন। এভাবে সাহাবী শেষপর্যন্ত ১২ দিরহাম দিয়ে জিনিসটা কিনলেন। তার সঙ্গী তাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, যে জিনিসটা ৫ দিরহামে কেনা যেত সেটা কেন আপনি ১২ দিরহাম দিয়ে কিনলেন? সাহাবী তাকে উত্তর দিলেন, আমি চিন্তা করে দেখলাম যে, আমি যদি জিনিসটার মালিক হতাম তাহলে ১২ দিরহাম দিয়ে বিক্রী করতে পারলে আমি খুশি হতাম, তাই আমি ১২ দিরহাম দিয়ে জিনিসটা কিনেছি।

একজন মুমিন হবে এরকম।

আমরা সবাই বেহেশতে যেতে চাই। অনেকে বেহেশতে যাবার জন্য এতই পাগল থাকে যে, যদি কারো কারনে তার নামাযের ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে তাকে মারধোর করতে পর্যন্ত দ্বিধা করে না( বাংলাদেশের পত্রিকায় পেয়েছি)। আমি এখানে বলে রাখি, ততক্ষণ পর্যন্ত কারো ঈমান পরিপূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে চাবে যে, তার ভাই তার আগে বেহেশতে যাক। ঈমানের স্বাদ যে পেয়েছে তার কাছে পৃথিবীর সবকিছু অর্থহীন হয়ে পড়ে। এই পৃথিবীর লোভ-লালসা, অর্থ-সম্পদ, গাড়ি, বাড়ি দ্বারা সে আর আকৃষ্ট হয় না। নতুন কোন পণ্য বাজারে বের হলেই সে সেটাকে কেনার জন্য পাগল হয় না। লোক দেখানোর জন্য সে কোন কাজ করে না। অন্যেরা তাকে সম্মান করুক, তার প্রশংসা করুক, তার সিজদা করুক সেটাও সে চায় না। কে তার উপকারে আসবে আর কে তার উপকারে আসবে না এইসব আর তার মাথাব্যথার কারন না। তার ধ্যান-জ্ঞান থাকে শুধু আল্লাহ। একজন মুমিন ব্যক্তির চরিত্র হল অসাধারন যা আমরা বেশিরভাগ সময়ই চিন্তা করতে পারি না। আর মুমিন হবার জন্য দরকার কুরআনের জ্ঞান। তবে এ কথা বলছি না যে, কুরআন না পড়লে মুমিন হওয়া যাবে না। আমি এমন মানুষ দেখেছি যারা তাদের মত করে স্রষ্টাকে পাবার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে যারা কুরআনের সন্ধান পেয়েছে, তারা যদি কুরআন থেকে জ্ঞান লাভ করতে না পারে, তাহলে সেটা হবে খুবি আফসোসের বিষয়। কুরআন তোতা পাখির মত আবৃতি করার জন্য না, এটা জ্ঞান লাভের জন্য। আসুন আমরা কুরআন পড়ি, নিজেদেরকে আল্লাহর পথে প্রতিষ্ঠিত করি।

Wednesday, March 19, 2008

আমি কী মুসলমান !

আমি কী মুসলমান !

মাসুদ রানা
১৯
মার্চ, ২০০৮, কুমামোতো, জাপান

ইসলাম মানে শান্তি এরকমই পড়ে এসেছি ছোটবেলা থেকে। কিন্তু যখন শুনলাম ইসলাম (আরবী শব্দ) হচ্ছে একটা ক্রিয়া পদ (verb), তখন মনে হল, আর যাই হোক ইসলাম মানে শুধুমাত্র শান্তি হতে পারেনা কারণ, শান্তি হচ্ছে বিশেষ্য পদ (noun)

ইসলাম শব্দটা এসেছে আরবী শব্দ-মূল সালাম এবং সিল্ থেকে সালাম মানে হচ্ছে শান্তি আর সিল্ মানে হচ্ছে আত্ননিবেদন করা (to submit[verb] ) অথবা আত্নসমর্পণ করা (to surrender[verb] ) কাজেই, ইসলাম এর অর্থ হচ্ছ আত্নসমর্পণের মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা আবারো বলছি, ইসলাম একটা ক্রিয়া পদ সালাম শব্দটাকে আরেকভাবেও বলা যায় - পরিপূর্ণতা অর্থাৎ ইসলাম কে এভাবেও বলা যায় যে, আত্নসমর্পণের মাধ্যমে পরিপুর্ণতা অর্জন করা ঠিক একইভাবে আস্সালামু আলাইকুম এর অর্থ, তোমার শান্তি হোক, আমরা সবাই জানি। এর অর্থ এভাবেও বলা যায় যে, তোমার জীবন সবদিক থেকে পরিপূর্ণ হোক কত চমৎকার একটা সম্বোধন !

আত্নসমর্পণ করা বলতে আসলে কি বুঝায়? এক কথায় বললে নিজেকে আল্লাহ্ কাছে সঁপে দেয়া এখন কথা হচ্ছে নিজেকে সঁপে দিয়ে কি করব কিংবা নিজেকে যে সঁপে দিয়েছি বুঝব কিভাবে ? জিনিসটাকে আমি এভাবে দেখি - ধরলাম, আমি কোন নতুন দেশে ভ্রমাণে গিয়েছি। সেই দেশের কিছুই আমি জানি না তখন আমি কি করব, আমাকে গাইড করে সবকিছু ঘুরিয়ে দেখাতে পারে এরকম একজন গাইডের শরণাপন্ন হব তারপর, গাইড আমাকে যা বলবে আমি সেই অনুযায়ী কাজ করব, কার, আমি কিছুই জানি না এটাকে বলে সঁপে দেয়া এখানে আমি সেই গাইডের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়েছি আমি বিশ্বাস করছি গাইড আমাকে ঠিকমতো সবকিছু ঘুরিয়ে দেখাতে পারবে এবং এরপর গাইড আমাকে যা করতে বলবে আমি তাই করব। সে আমাকে ডাইনে যেতে বললে আমি ডাইনে যাব; সে আমাকে বাঁয়ে যেতে বললে আমি বাঁয়ে যাব - কারণ আমি যানি তা না করলে আমি হারিয়ে যাব, এবং তাতে আমার নিজেরই ক্ষতি হবে

ইসলামের সঁপে দেয়াটা ঠিক এরকমই মনে হয় আমার কাছে আল্লাহ্আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং একইসাথে আমাদের পথ দেখানোর জন্য গাইডলাইন দিয়েছেন (কোরান এবং হাদীস) কোরানে যদি বলা থাকে ডাইনে যেতে আর যদি আমি বাঁয়ে যাই, তাহলে আমি কিভাবে বলব যে, আমি নিজেকে আল্লাহ্ কাছে সঁপে দিয়েছি অর্থাৎ, আল্লাহ্ কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া বা নিজেকে সমর্পণ করার মানে হচ্ছে আল্লাহ্আমাকে যে পথ দেখিয়েছেন সেই পথে চলা, সহজভাবে বললে, আল্লাহ্কে মান্য করা; তার আদেশ নিষেধ মেনে চলা আর যে এরকম করে সেই লোকই তো মুসলিম বা মুসলমান কারণ, আরবী শব্দ মুসলিম আর বাংলা অর্থ হচ্ছে আত্নসমর্পণকারী আমি যখন এভাবে জানলাম, তখন আমার মনে হতে থাকল, আরে আমি কি আসলেই আত্নসমর্পণকারী কিনা ? দেখলাম যে না; আমিতো আল্লাহ্কে খুবই কম মান্য করছি এত কম যে, নিজেকে আত্নসমর্পণকারী ভাবতে লজ্জা লাগল - মনে হল যে, না, আমি তো আত্নসমর্পণকারী না তার অর্থ আমি মুসলমানই না !!

ইসলাম শব্দটাকে আরো সুন্দরভাবে বিশ্লেষেণ করা যায় ব্যুৎপত্তিগত ভাবে এর অর্থ দুইটি - শান্তি (বিষেশ্য পদ) আত্ননিবেদন করা (ক্রিয়া পদ) বা আত্নসমর্পণ করা (ক্রিয়া পদ) আর, মান্য করা জিনিসটা না থাকলে যেহেতু আত্নসমর্পণ করার কোন মানেই হয় না কাজেই ইসলাম এর মাঝে মান্য করা (ক্রিয়া পদ) শব্দটাও অনর্ভুক্ত করা যায় আবার, কোন একটা কাজ কেউ যখন করে েই কাজটা আন্তরিকতার সাথে না করলে সত্যিকার অর্থে কাজটা পরিপূর্ণতা পায় না - তা সে যে কাজই হোক না কেন কাজেই ইসলাম শব্দটাকে আরও বিশদভাবে এভাবেও বলা যায় - ইসলাম হচ্ছে একটা ক্রিয়া পদ যার অর্থ, আল্লাহ্ কাছে আত্নসমর্পণ আত্ননিবেদন করে, আল্লাহ্ আদেশ-নিষেধ আন্তরিকতার সাথে মান্য করে জীবনে পরিপূরণতা শান্তি অর্জন করা (ক্রিয়া পদ) আর, যেই ব্যক্তি এই কর্মটা করে সেই আত্নসমর্পণকারী বা মুসলিম বা মুসলমান

মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলাম কিংবা শুধু বিশ্বাস করলাম আল্লাহ্আছে, জিনিস একজন মানুষকে মুসলিম বা মুসলমান বানায় না কেউ যখন আমাকে এখন জিজ্ঞেস করে আমি মুসলিম কিনা, তখন নিজের মাঝেই চিন্তা আসে যে, আমি আসলেই আত্নসমর্পণকারী কিনা ? তাই, উত্তর দিতে অনেক ভাবতে হয় মুসলিম শব্দের অর্থ না জেনে আগে যখন বোকার মত নিজেকে মুসলমান বলতাম, এখন অত সহজে নিজেকে মুসলমান বলতে পারি না !