Saturday, May 17, 2008

চার বিয়ে


পরম দয়ালু ও অসীম করুনাময় আল্লাহর নামে শুরু করছি।

আমি এখানে আমার মতামত ব্যাখ্যা করব মাত্র। আল্লাহ সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী এবং আমরা আল্লাহর কাছে জ্ঞান প্রার্থনা করি।

ইসলাম কে আক্রমণ করার জন্য হাতিয়ার হিসেবে সবাই চার বিয়েকে বেছে নেয়। তারা বিভিন্ন রকমের যুক্তি বের করে। শুধু তাই না, অনেক মুসলমানরাও এ জিনিসটাকে নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে। আধুনিক বিভিন্ন তত্ত্বকে আমরা এমনভাবে অন্ধ অনুসরন করি যে একটু মুক্তভাবে আমরা চিন্তাও করি না। আমার এই লেখার অন্যতম উদ্দেশ্য হল এ ধরনের বিভিন্ন ধরনের ভুল যুক্তিগুলোকে খন্ডন করা। আমার সবকিছু যে সঠিক হবে সেটা আমি নিজেও মনে করি না। কেউ আমার ভুল ধরিয়ে দিলে খুশি হব। এ বিষয়ে আলোচনা করার আগে প্রথমে আমাদের ইসলামের মূল শিক্ষা সম্পর্কে জানতে হবে। যেকোন বিষয় পরিপূর্ণভাবে বুঝতে হলে প্রথমে তার বেসিক বিষয়গুলো আয়ত্ব করতে হয়। নিচের বিষয়গুলো নিয়ে প্রথমে আলোচনা করা যাক।


কুর'আনের শিক্ষা

কুর'আনের শিক্ষাকে যদি এক বাক্যে প্রকাশ করি, তাহলে তা হবে এরকম , "আমি অন্যের জন্য তাই ভালবাসব যা আমি নিজের জন্য ভালবাসি"। মোটকথা আমার মধ্যে কোন ধরনের স্বার্থপরতা থাকবে না। আমি নিজে কোন কিছু পাওয়ার আগে অন্যের কথা চিন্তা করব। অন্যকে ভালবেসে আমি আনন্দ পাব। আর এই ভালবাসা হচ্ছে সত্যিকারের ভালবাসা। কোথা থেকে আসবে সেই ভালবাসা? আমি বলি তা আসবে, স্রষ্টাকে ভালবেসে, জ্ঞান অর্জন করে, এই জীবনের উদ্দেশ্যকে জেনে, নিজেকে জেনে, সত্যিকারের নিজেকে মেনে নিয়ে। অন্যের কষ্ট দেখে আমার অন্তর কাঁদবে, তার কষ্ট দূর করার জন্য আমি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালাব। আমার মধ্যকার "আমি" রূপান্তরিত হবে "আমরা"তে। অথচ অজ্ঞতা আমাদেরকে আজ এমন অবস্থায় নিয়ে এসেছে যে, আমি সুখী হলেই যথেষ্ঠ, অন্যেরা কি রকম আছে তা আমার দেখার বিষয় না। আমরা আজ এতটাই স্বার্থপর হয়েছি যে, আমার নিজের জন্য সবসময় সেরা জিনিসটা চাই। নিজে কষ্ট করে অন্যের উপকার করা, নিজের কোন কিছু ত্যাগ করা আমরা আজ প্রায় ভুলে যেতে বসেছি। হ্যা, আমরা অন্যের উপকার করি, তবে ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের স্বার্থে আঘাত না হানে। আমরা তাদের উপকার করি, যাদের কাছ থেকে আমার উপকার পাবার সম্ভাবনা থাকে। তবে আমি হতাশ না, পৃথিবীতে এখনও অনেক ভাল মানুষ আছে, মানুষের মাঝে অনেক অনেক ভাল গুণাবলী আছে, আরে সে জন্যই আমি একজন মুমিন। কুর'আনের অন্যতম একটা কাজ হচ্ছে মানুষের অন্তরের এই সমস্ত রোগকে সারিয়ে তোলা।


মেয়ে হল মানুষ তৈরির কারিগর

ইসলামে নারীকে মায়ের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। মায়ের কাজ হল মানুষ গড়ে তোলা। মানুষ গড়ে তোলাকে আজ আমরা গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজই মনে করি না। আমাদের কেউ যখন কোন একটা যন্ত্র তৈরি করে, কোন আবিষ্কার করে, তখন আমরা তার কত প্রশংসা করি, তাকে অভিনন্দন জানাই, তাকে পুরষ্কৃত করি, তার গুণগান গাইতে থাকি। অথচ আমরা কখনও চিন্তা করে দেখি না যে, একজন মানুষ তৈরি করা তার থেকে কত গুণ কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজ। একজন সুন্দর মনের, সুন্দর চরিত্রের, জ্ঞানসম্পূর্ণ মানুষ তৈরি করা কি এত সহজ? আমরা আমাদের আশেপাশে একটু ভাল করে তাকিয়ে দেখি। মানুষের কোন অভাব নেই। কিন্তু কয়জন মানুষ পাব আমরা যাদের থেকে আলো ছড়ায়। বর্তমান সময়ের বিভিন্ন নৈতিক অবনমন এবং অজ্ঞানতার নিদর্শন হচ্ছে আমরা মাদেরকে তাদের কাজের জন্য যথাযথ মূল্যায়ণ করি না। আমরা কখনই একজন মাকে প্রশংসা করি না। সন্তান লালন করাকে আমরা খুবি তুচ্ছ কাজ হিসেবে গণ্য করি। একজন মানুষকে বড় করা, মানুষকে, এটা তুচ্ছ করার মত কোন বিষয় না। একটি সন্তানের জন্মের পর থেকে তার পরিপূর্ণভাবে বড় হওয়া পর্যন্ত তার দরকার সার্বক্ষনিক ভাল সাহচর্য, সঠিক দিক-নির্দেশনা, সঠিক জ্ঞান, ভালবাসা, যত্ন ও আরো অনেক কিছু। তাকে মানুষসহ সমস্ত সৃষ্টিকে ভালবাসতে শেখাতে হবে, তাকে মনের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করতে হবে। এসব কিছুর জন্য মায়ের ভূমিকা হল প্রধান এবং অন্য কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, যন্ত্রকে দিয়ে একে প্রতিস্থাপন করা যায় না, যাবে না। নেপোলিওনের সেই বিখ্যাত উক্তিটা উল্লেখ করা যাক। "আমাকে তোমরা ভাল মা দাও, আমি তোমাদের ভাল জাতি দেব।"


মেয়ে হল পালনকর্তা

একজন মেয়ের ভূমিকা শুধু মা হিসেবেই না, পরিবারের পালনকর্তা হিসেবে তার অনেক বড় এবং সম্মানজনক ভূমিকা। একজন নারী তার স্বামীকে লালন-পালন করে, পরিবারের প্রতিটা সদস্যকে সে লালন- পালন করে। আল্লাহ এর রব বা পালনকর্তা গুণের সবচেয়ে বড় অধিকারী হচ্ছে একজন নারী। অথচ আমরা মেয়েদেরকে, মাদেরকে, স্ত্রীদেরকে তাদের প্রাপ্য সম্মানটা দেই না। প্রায়ই তাদের প্রতি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয়। অথচ স্বামীরা যদি স্ত্রীকে তার কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাত নিয়মিত, প্রশংসা করত, স্ত্রীদের আরো সময় দিত তাহলে মেয়েরাও কত আনন্দের সঙ্গে তার উপর অর্পিত দায়িত্বটা পালন করত। মেয়েদের উপর সব দোষ দিতে ছেলেরা খুব ওস্তাদ। এর থেকে বের হয়ে আসতে হবে।


ছেলে ও মেয়ের আলাদা আলাদা দায়িত্ব

ছেলেদের দায়িত্ব হচ্ছে সংসারের ভরণ-পোষন করা, খাবারের ব্যবস্থা করা, প্রয়োজন মেটানো ইত্যাদি। ছেলে এবং মেয়ে, প্রত্যেকে তার নিজস্ব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের উপযুক্ত করে তৈরি হয়েছে। বর্তমানে খুব জনপ্রিয় একটা স্লোগান হচ্ছে "ছেলে মেয়ে সমান"। আর আমরাও কোন কিছু চিন্তা না করে এটাকে মেনে নিয়েছি। আমার কাছে এর থেকে বড় মিথ্যা আর হতে পারে না। আমি কিভাবে একজন মেয়ের সমান হব, যেখানে আমি স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি যে শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে আমি তাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এমন অনেক কিছু আছে যা শুধু মেয়েরাই পারবে, আবার এমন অনেক কিছু আছে যা শুধু ছেলেরাই পারবে। আমি বলব, ছেলে মেয়ে সমান বলে দুই পক্ষকেই অপমান করা হয়। যেখানে, ছেলে মেয়ে একজন আরেকজনকে সাহায্য করে, একে অপরের সহায়ক হিসেবে চমৎকার মানবজাতি গড়ে তোলে, আনন্দময় পৃথিবী পাই আমরা, সেখানে তাদেরকে একে অপরের প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রাণান্তর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর থেকে বড় অজ্ঞতা আর কি হতে পারে? আর বানরের মত অন্ধ অনুসরন করে যাচ্ছি আমরা।


জীবনের উদ্দেশ্য নিজেকে গড়ে তোলা

আমাদের এ জীবনের উদ্দেশ্য কি? বিভিন্নভাবে এর উত্তর দেয়া যেতে পারে। আমি এটাকে এভাবে বুঝি। এ জীবনের উদ্দেশ্য হল নিজেকে গড়ে তোলা। এখন প্রশ্ন হল নিজেকে গড়ে তোলা বলতে কি বোঝায়? আর আমি আসলে কে? আমার শরীরটা কি আমি? এই শরীরকে গড়ে তোলা, বড় করা কি এ জীবনের উদ্দেশ্য? আমাদের শরীর এমনিতেই বড় হয়। আমাদের এ বিষয়ে চিন্তা করতে হয় না। শুধুমাত্র খাওয়া-দাওয়া করলেই হয়। এই খাওয়ার ব্যাপারটাও আমাদের এমনিতে হয়ে যায়। আমাদের ক্ষুধা লাগে, আমরা ক্ষুধা মেটানোর জন্য খাবার যোগাড় করি। তবে একটা সময়ের পর আমরা যতই খাই না কেন, আমাদের শরীর আর বড় হয় না, তারপর আবার তা ছোট হতে থাকে। তাহলে আমিটা কে? আমার অন্তর, আমার আত্মা কি? কুর'আন বলছে আমাদের এই শরীরের বাইরে কিছু একটা আছে যেটাকে আমাদের গড়ে তুলতে হবে। কাজেই আমাদের এমন সাহচার্য দরকার যেখানে আমাদের মনের বিকাশ হবে, জ্ঞানের বিকাশ হবে। অথচ আফসোস যে আজ আমরা শুধুমাত্র আমাদের শরীর নিয়ে মেতে উঠেছি।


কাকে বিয়ে করব?

একজন ছেলে যখন বিয়ে করব তখন কি ধরনের মেয়েকে বিয়ে করবে? সুন্দরী, রূপসী, ধনবতী, বড় ডিগ্রীধারী এ ধরনের কাউকে? নাকি যার আচার-ব্যবহার শালীন, সুন্দর, যার ভিতরে অন্যকে পালন করার গুণ আছে, যার সঙ্গে থাকলে সে তার জীবনের আসল উদ্দেশ্যকে পূরণ করতে পারবে সে ধরনের কাউকে? ইসলাম বলছে দ্বিতীয়জনকে বিয়ে করতে। এবার দেখা যাক, একজন মেয়ে যখন বিয়ে করবে তখন সে কি ধরনের ছেলেকে বিয়ে করবে? লম্বা, সুন্দর, হ্যান্ডসাম, ধনী, বড় ডিগ্রীধারী, সমাজে তথাকথিত উচু অবস্থানে আছে, এ ধরনের কাউকে? নাকি যার আচার-ব্যবহার সুন্দর, যার জ্ঞান আছে, যার সাথে থাকলে জীবনের সত্যিকারের উদ্দেশ্য পূরণ হবে, স্রষ্টার কাছাকাছি যাওয়া যাবে? ইসলাম বলছে দ্বিতীয়জনকে বিয়ে করতে। বর্তমানে মেয়ে বিয়ে দেবার সময় সবাই দেখে যে যেখানে বিয়ে হবে সেখানে মেয়ের শরীরকে বিভিন্ন রকমের জিনিস দিয়ে সাজিয়ে রাখবে কিনা। আর ছেলেরাও দেখে যে কোন মেয়ের শরীরটাকে ভাল করে সাজিয়ে সমাজে প্রদর্শন করা যায়, যাতে তার স্ট্যাটাস আরো বাড়বে, সবাই বলবে যে ভাই আপনি তো খুব লাকী, খুব সুন্দর মেয়ে পেয়েছেন আর সে মনে মনে তৃপ্তি পাবে। এটা অজ্ঞতা। ইসলামে বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ে উভয়েরই পূর্ণ সম্মতি লাগে।


জ্ঞানার্জন হল বাধ্যতামূলক

অনেকে আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারে কিন্তু আমি মনে করি যে জ্ঞানার্জন না করে মু'মিন হওয়া যায় না। ছেলে-মেয়ে সবার জন্য জ্ঞান অর্জন করা বাধ্যতামূলক। জ্ঞান কি জিনিস এটা নিয়ে অনেক বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন আছে। আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। সেজন্য দরকার একে অপরের সাথে আলোচনা, পড়াশোনা, ভ্রমণ, পর্যবেক্ষণ, চিন্তা ইত্যাদি। প্রত্যেক নবীর মিশন ছিল মানুষকে শিক্ষিত করা। আমাদের মেয়েদের সঠিক শিক্ষা দিতে হবে যাতে তারা ভাল মা হতে পারে, তার সন্তানদের শিক্ষিত করতে পারে।


এবার মূল অংশে আসা যাক। সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াতে প্রথমে দুই, তিন বা চার জনের বিয়ের কথা বলা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে যে, যদি ভয় কর যে সমান অধিকার দিতে পারবে না তাহলে একজনকেই। প্রথমে দেখি যে ইসলাম কি এক বিয়ে প্রথাকে একাধিক বিয়েতে নিয়ে এসেছে নাকি বহুবিবাহ থেকে সুনির্দিষ্ট সংখ্যায় নিয়ে এসেছে? উত্তর কিন্তু পরেরটা। নির্দিষ্ট করে বললে ইসলাম এক বিবাহতেই নিয়ে এসেছে। কারন একের অধিক বিয়ে করার ক্ষেত্রে আমাকে কুর'আনের ওই শর্তের কথা বিবেচনা করতে হবে। প্রাচীনকালে মেয়েদের কোন সম্মান ছিল না। ছেলেরা ইচ্ছেমত মেয়েদের বিয়ে করত, ১০ জন, ২০ জন বা আরো বেশি। অন্তত আরব সমাজে এই ছিল অবস্থা। আল্লাহ এখানে সুনির্দিষ্ট একটি নিয়ম এনে দিয়েছেন মানবজাতির জন্য। কাজেই সাধারনভাবে এক বিবাহ। এতে কোন সমস্যা নেই । ইসলাম ও তাই বলছে। তবে ইসলাম বলছে আরো বেশি কিছু যা আমাদের জন্য খুবি উপকারী। যখন পরিস্থিতি দাবী করবে, যখন একজন ছেলে তার সততার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে, তার সৎ উদ্দেশ্য থাকবে তখন সে ইচ্ছে করলে একের অধিক বিয়ে করত পারবে। পরিস্থিতির দাবী কি? এখানেই আসবে কুর'আনের মূল শিক্ষা, “আমি অন্যের জন্য তাই ভালবাসব যা আমি নিজের জন্য ভালবাসি”।আমি যখন দেখব সমাজে অনেক মেয়ে নির্যাতিত হচ্ছে, অনেক মেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, তখন আমি কেন তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যাব না? আবার অনেক মেয়ে অল্প বয়সে বিধবা হয়ে যায়। অনেক জায়গায় যুদ্ধের কারনে বা অন্য কোন কারনে মেয়ের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও আরো অনেক কারন থাকতে পারে। এখন কাউকে ১০টাকা, ১০০টাকা, ১০০০টাকা দিয়ে সাহায্য করা আর কাউকে সারা জীবনের জন্য সাহায্য করা, কোনটা ভাল? কাজেই আমি যদি চারজন বিয়ে করে সবার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করি তাহলে সমস্যা কোথায়? একবার চিন্তা করে দেখুন ওই মেয়েগুলো কত খুশী হবে এতে।


প্রশ্ন উঠে যে, প্রথম স্ত্রী তো প্রচণ্ড কষ্ট পাবে। হ্যা, সাধারনভাবে তাই মনে হয়। তবে, সে যদি মু'মিন হয়, সে যদি জ্ঞানী হয়, সে যদি স্বার্থপর না হয়, সে যদি অন্যকে ভালবাসতে পারে তাহলে তা হবে না। কারন তারও অন্তর কাদতে থাকবে তার অন্য বোনদের কষ্ট দেখে। তখন হবে এরকম যে, প্রথম স্ত্রী তার স্বামীকে অনুরোধ করবে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করতে। আর এরকম কিন্তু ঘটেছে। শুধুমাত্র যদি আমরা ছেলেরা এবং মেয়েরা আমাদের স্বার্থপরতা ও হিংসা- প্রতিহিংসা থেকে মুক্ত হতে পারি, তাহলে বুঝতে পারব যে একের অধিক বিবাহ কত উপকারী হতে পারে আমাদের সমাজের জন্য। এই পৃথিবীতে বিভিন্ন সমাজ আছে। আমেরিকা, জাপানের মত সমাজ আবার বাংলাদেশ, ভারত এর মত সমাজ, অন্যদিকে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের সমাজ। বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। আমাদের দেশে হাজার হাজার মেয়ে গার্মেন্টস এ কাজ করে মানবেতর জীবন যাপন করছে। হাজার হাজার মেয়ে পতিতালয়ে আছে। কেন? এর সমাধান কি? ধরনের মেয়েরা এবং এর সাথে আরো অনেক মেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। কেউ যদি তাকে নিরাপত্তা দিতে চায়, সম্মান দিতে চায় তাহলে তারা তা লুফে নেবে। কাজেই কোন আর্থিক ক্ষমতাসম্পন্ন কোন ছেলে যদি এ ধরনের কোন মেয়েকে বিয়ে করে তাকে বাসস্থান, নিরাপত্তা, ভালবাসা, ভরণ-পোষণে পাবার ব্যবস্থা করে তাহলে সেটা কি সমাজের জন্য ভাল নয়?


প্রশ্ন উঠতে পারে, একজন ছেলের পক্ষে তো চার জন মেয়েকে ভালবাসা সম্ভব না। তাহলে এখানে তো অবিচার হচ্ছে। এটা হয়তো সত্য যে দুইজন মানুষকে সমান ভাবে ভালবাসা সম্ভব না। তবে আমাদের মধ্যে ভালবাসার প্রচলিত যে সংজ্ঞা আছে তা আমার কাছে সঠিক বলে মনে হয় না। একটু ভাল করে চিন্তা করে যদি দেখি, তাহলে বুঝতে পারব যে, “আমি তোমাকে ভালবাসি” বলে আমি আসলে আমার নিজেকে ভালবাসি।কিভাবে? আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি কারন ওই মেয়েকে আমার ভাল লাগে, তার সাথে থাকলে আমার ভাল লাগে, তার কথা আমার ভাল লাগে। সবি কিন্তু আমার নিজের ভাল লাগার জন্য। কাজেই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমি তার ভাল লাগার জন্য কি করি? তার ভাল লাগার জন্য কিছু করে আমি আনন্দ পাই কিনা? যদি পাই তাহলে আমি বলব সেটা হল আসল ভালবাসা। সাধারণত আমরা যখন খুব বেশি আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাই, তখনই আমরা স্বার্থপর হয়ে যাই। 'তুমি না থাকলে আমি বাচব না, আত্মহত্যা করব' - এটা খুবি স্বার্থপরসুলভ একটি উক্তি। আত্মহত্যা করা হচ্ছে স্বার্থপরতার চূড়ান্ত নিদর্শন। স্বার্থপরতার আরেকটি উদাহরন হচ্ছে সবার কাছে নিজেকে ভাল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার আকুল চেষ্টা। সমাজে যখন অবিচার হয়, কেউ যখন খারাপ কাজ করে, অন্যায় করে, তখন কেউই এগিয়ে যায় না। অনেকে কিছু বলে না কারন ওই লোকদের কাছে সে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলবে। সে তার স্বার্থ দেখে। কাজেই সমাজের কিছু সংখ্যক লোক কি মনে করবে, তাদের কাছে আমার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে কি থাকবে না সেটা চিন্তা করে আমি কি ন্যায়-বিচার থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখব? খারাপকে ভাল বলতে থাকব? খারাপ ও ভালকে মিশিয়ে ফেলব? এমনও হতে পারে যে, সমাজের সবাই ভুল পথে আছে, যেভাবেই হোক আমার কাছে জ্ঞান এসেছে সবাই ভুল। তখন আমি কি করব? নিজের স্বার্থের কথা চিন্তা করে চুপ করে বসে থাকব? অনেক মুসলিমরা আজ এ কাজ করছে। তারা যখন চার বিয়ের কথা বলে তখন মুসলমানরা আমতা আমতা করে, বিভিন্নভাবে কুর'আনকে ও ইসলামকে নিজের মনের মত করে সাজাতে থাকে। মূল কথা হচ্ছে , কেউ যখন তার আত্মকেন্দ্রিকতা থেকে মুক্ত হতে পারবে, তার ভালবাসাকে আল্লাহর মাধ্যমে সমস্ত সৃষ্টির মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারবে, তার জন্য প্রত্যেক মানুষকে ভালবাসা খুব একটা কঠিন বলে মনে হয় না।


অনেকে বলে যে, একজন ছেলে অন্য মেয়েদের ভোগ করার জন্য জোর করে একের অধিক বিয়ে করে, সেটা কি ঠিক নাকি? এর উত্তর সহজ। কেউ কাউকে জোর করে বিয়ে করলে তো সেটা বিয়েই হবে না। কাজেই কেউ যদি ইসলাম কে অমান্য করে কোন একটা কাজ করে সেটার দায় ইসলামকে নিতে হবে কেন? একজন মেয়ে অবশ্যই তার পছন্দমত বিয়ে করবে। এখানে একের অধিক বিয়ের কথা বলা হচ্ছে উভয় পক্ষের সম্মতি নিয়েই। কোন মেয়ে সেরকম ছেলেকে বিয়ে না করতে পারে যার স্ত্রী আছে। এটা তার পছন্দ। কিন্তু কোন মেয়ে যদি সব জেনে শুনেই বিয়ে করতে চায় ? এখন কোন মেয়ের স্বামী যদি দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায়, এবং মেয়েটা জানে যে তার স্বামী সৎ, তার স্বামীর উদ্দেশ্য ভাল তাহলে তার স্বামীকে বাধা দেয়া উচিত না। কোন ছেলে যদি শুধুমাত্র ভোগ করার জন্য একের অধিক বিয়ে করতে চায়, তাহলে আমার বলতে হচ্ছে যে, সে মুসলিম না। আর এ ধরনের ছেলেকে তো মেয়েই দেয়া যাবে না। আর তার স্ত্রীকেও তাকে ত্যাগ করা উচিত যদি না সে অনুশোচনা করে ভাল হয়। কাজেই এখানে সবকিছু হতে হবে স্বতস্ফূর্তভাবে, নিজের সম্পূর্ণ স্বাধীন ইচ্ছায়। নিজের ইচ্ছাতেই কোন মেয়ে যদি কাউকে স্বামী হিসেবে পেতে চায় সেখানে আমরা শুধু শুধু নারী অধিকার ইত্যাদি স্লোগান তুলে বাধা দিতে যাব কেন? আমি কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তার দেয়ার পর সে যদি আনন্দের সাথে রাজী হয়? কোন ছেলে যদি কোন মেয়েকে বিয়ে করে তাকে নিরাপত্তা দিতে চায় তার আশেপাশের মানুষেরা কেন তার পেছনে লাগব? অথচ কোন ছেলে যখন ইচ্ছেমত 'গার্ল ফ্রেন্ড' বানিয়ে যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছে তখন আমাদের কিছু হয় না। আমাদের ভাব সাব এরকম যে ওই ছেলে নারীদের খুব সম্মান করছে। টেলিভিশনে পণ্যের বিজ্ঞাপনে যখন নারীকে নগ্ন করে উপস্থাপন করা হয় তখন যে কেন তথাকথিত নারী অধিকারবাদীরা সোচ্চার হয় না তা আমার একদমই বোধগোম্য নয়। এই সামান্য জ্ঞান যদি আমাদের মাঝে না থাকে, তাহলে আমাদের কি জ্ঞান আছে?


অনেকে বলে যে, ছেলেরাই কেন শুধু চার বিয়ে করতে পারবে, মেয়েরা কেন নয়? হুম, ছেলে-মেয়ের প্রকৃতি, আচার-আচরণ, ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়গুলো বুঝলে এটা খুব সহজেই বুঝে আসার কথা। চিন্তা করা যাক একটা মেয়ের চার জন স্বামী আছে। প্রথম সমস্যা হবে যখন তার সন্তান হবে। কার সন্তান? উত্তর হচ্ছে ডি,এন,এ টেস্ট করে খুব সহজেই জানা যাবে। কিন্তু পৃথিবীর কয়জন মানুষের ডি,এন,এ টেস্ট করানোর সামর্থ্য আছে? আচ্ছা এবার অন্য বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা যাক। মেয়েকে চারটা বাসায় চার জন স্বামীর জন্য আলাদা আলাদা ভাবে সময় দিতে হবে। চার জন স্বামীই যখন বাইরে থেকে কাজ করে এসে বাসায় ফিরবে তখন কি হবে? তথাকথিত আধুনিক চিন্তাবিদরা বলবে যে, কেন সে স্বামী নিজের কাজ তো নিজেই করতে পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে তারা একজন ছেলে ও মেয়ের প্রকৃতি কি সেটা ভুলে গেছে। আমি একজন ছেলে। আমি জানি ছেলেরা কি রকম। ছেলেরা হল অনেকটা অস্থির প্রকৃতির। আমি যখন সারাদিন কাজ করে বাসায় এসে শূণ্য বাসা পাই তখন আমার ভিতরটা প্রচন্ড অস্থির হয়ে যায়। যখন কোন ছেলে ঘরে এসে শান্তি পায় না, তখনই সে বাইরে গিয়ে বিভিন্নভাবে শান্তি খোজার চেষ্টা করে। একজন মেয়ে তার স্বামীর স্মৃতি নিয়ে সময় কাটাতে পারে, স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে পারে। কিন্তু ছেলেরা পারে না। এটাই বাস্তব। আর আজ আমরা এই বাস্তবতা থেকে দূরে বলেই আমাদের সমাজের এই অবস্থা। তাও না হল মেনে নিলাম। কিন্তু যখন সন্তান হবে তখন? আগেই বলেছি সন্তানের জন্য দরকার সার্বক্ষনিক সাহচর্য। চারজন স্বামীর সন্তানদের লালন-পালন করা তখন একজন মেয়ের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়বে। মোটকথা একজন মেয়ের চার বিয়ে হল অবাস্তব ও তর্কের জন্য তৈরি করা কল্পনা মাত্র।


অনেকে বলতে পারে যে, আচ্ছা সবকিছু মানলাম, কিন্তু যখন কোথাও ছেলের সংখ্যা মেয়ের তুলনায় খুব বেশি হবে তখন? তবে কিছু ব্যাপার লক্ষ্য করি। একজন মেয়ে সন্তানের রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ক্ষমতা বেশি। কাজেই সাধারনভাবে মেয়ের সন্তানের সংখ্যা বেশি হয়। আবার, যুদ্ধ বা অন্যান্য ক্ষেত্রে ছেলেদেরই প্রাণ দিতে হয় বেশি। ইরাক, প্যালেস্টাইন তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। ছেলেরা অস্থির প্রকৃতির। মেয়েরা অনেক বেশি স্পর্শকাতর। মেয়েরা মা, তারা মানুষ তৈরি করে। পরিবার হচ্ছে সমাজের কেন্দ্র আর তার পালনকর্তা হল মেয়েরা। কাজেই আল্লাহ সেভাবেই আমাদের জন্য নিয়ম তৈরি করেছেন।


আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে আমরা সবাই কারো না কারো কাছে নিজেকে সমর্পণ করি। বেশিরভাগ সময়েই সেই সংখ্যাটা হয় অনেক। কেউ তার বস এর কাছে, কেউ তার বন্ধুদের কাছে, কেউ টাকার কাছে, কেউ স্ট্যাটাস এর কাছে। এতসব জিনিসের কাছে সমর্পণ করার চেয়ে নিজের স্রষ্টার কাছে সমর্পণ করা অনেক ভাল এবং সেটাই হচ্ছে পৃথিবীর জিনিসের কাছে মাথা নত না করার একমাত্র পথ। ইসলাম নারীদের সম্মান নিশ্চিত করেছে এবং সমাজকে স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু ঠিক করে দিয়েছে। আমাদের আশেপাশে যা কিছু হচ্ছে তার সবগুলোই ঠিক কিনা আমাদের ভালভাবে চিন্তা করে দেখা দরকার।


আমি আল্লাহর কাছে আমার ভূল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাই। যারা জ্ঞান চায় আল্লাহ তাদের জ্ঞান দিক।


Tuesday, May 6, 2008

হিল্লা বিয়ে

মাসুদ রানা
৫, মে ২০০৮ সুকুবা, জাপান

হিল্লা বিয়ে


আমার প্রচুর ভূল হয় আর আল্লাহ্‌ সবচেয়ে ভাল জানেন ।


প্রথমে ভেবে দেখেছিলাম, বিয়ে কি ? এবং তালাকও বা কি ? বিয়ে কি এই নিয়ে সবার স্বাভাবিক যা মত আমারও তাই মত । কিন্তু তালাক কি ? স্বামী-স্ত্রী একে অপর থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া । এবং একটা কথা, ইদানীং মাথায় আসলো, তালাক হলেই যে কারো কিংবা উভয়ের দোষে সেটা হতে হবে তাই না । অনেকক্ষেত্রে এমনও হতে পারে দুজনেই ভাল মানুষ, কিন্তু একজন আরেকজনের টাইপ না । হাসিমুখেও কিন্তু তালাক হতে পারে ।


এইটা আমরা সবাই নিশ্চয়ই জানি, যে ইসলামে মেয়েদেরও ছেলেদের কাছ থেকে তালাক নেয়ার অধিকার আছে । তালাক ছেলেই দেক, আর মেয়েই দেক, কিভাবে দিলে সেইটা তালাক বলে গণ্য হবে, আর কিভাবে দিলে সেইটা হবে না ? মুখে তিন তালাক বললেই কি তালাক হবে নাকি কোর্টের মাধ্যমে সেইটা হতে হবে ? কোরানে তিন তালাকের কথা বলা আছে, তা ঠিক । কিন্তু, রাগের মাথায় একবার তিনবার তালাক বলে ফেললাম আর তালাক হয়ে গেল !?


আগেই বলেছি, তালাকটা হাসিমুখেও হতে পারে । একজনের সাথে আরেকজনের মনের মিল হতে নাও পারে । সেই ক্ষেত্রে আমরা বিচ্ছেদ নিতে পারি । কিন্তু যেন তাড়াহুড়া না করি, ভাবি, আসলেই কি যে কারণে বিচ্ছেদ নিতে চাচ্ছি সেটা ঠিক হচ্ছে, আসলেও কি বিচ্ছেদটা হলে দুজনের জন্যই ভাল হবে ? বদ্‌মেজাজী জিনিসটা যে মোটেই ভাল না সেটা তো আমরা সবাই জানি । বদ্‌মেজাজের কারণে হুট করে মুখে তিন তালাক বলে ফেললাম, আর তালাক হয়ে যাবে ? আমার যেটা মনে হয়, বিচ্ছেদের আগে ভেবে দেখব বারবার । তারপর দুজনে মিলে আলোচনা করে দেখব, জিনিসটা ঠিক হচ্ছে কিনা । আলোচনা করে দেখলাম যে না দুজনের বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়াটাই ভাল । এই সিদ্ধান্ত যখন নিলাম, তখন হচ্ছে এক তালাক । তারপর, আবারো ভাবতে থাকব, যেহেতু বিয়ে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইসলামে । এরকম করে আবারো যখন, সিদ্ধান্ত হবে, না বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়াটাই ভাল, সেটা হবে দুই তালাক । তারপর আবার । এবং একইভাবে তিন বারে তিন তালাক । এবং তখন থেকে আমরা আর স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসাথে থাকতে পারব না । তালাকটা হচ্ছে একটা লম্বা প্রসেস এবং অনেক সময় ধরে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপার ।


দুজনের সাথে দুজনের আলাদা হয়ে যাওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে । আমি নিজে অবিবাহিত, হয়তো বিবাহিত জীবনে কি কি সমস্যা হয়, কিছুই জানি না । কিন্তু, আমার মনে হয়, দুজন দুজনের চেয়ে আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, ঝগড়া থেকে, সন্তান না হওয়া থেকে, দুজনেই ভাল, কিন্ত মন মানষিকতার ব্যবধান অনেক, কিংবা কোন একটা বড় উদ্দেশ্যের জন্য ইত্যাদি অনেক কারণেই । এমনকি, এও বলা যায়, অনেক পরিবারে আছে, দুজন দুজনকে বছরের পর বছর ধরে সহ্য করতে পারছে না, কিন্তু সমাজের ভয়ে আলাদা হচ্ছে না । আমার তো মনে হয়, এই ক্ষেত্রে তাদের মাঝে বহুবার তালাক হয়ে যায়, যদিও তারা কেউ মখে স্পষ্ট করে উচ্চারণ করে তালাক বলে না কিংবা কোর্টে গিয়ে সাইন করে না ।


যাই হোক, কোরানের সূরা বাকারার ২২১ নম্বর আয়াতে কি ধরণের মেয়ে বিয়ে করা যাবে, তার একটা ঈংগীত দেয়া হয়েছে । বিয়ে এবং তার পরের বিষয় নিয়ে ইংগীত দেয়া আছে তার পরের আয়াতগুলোতে । কিন্তু যেই আয়াতটা আমাদের মনে সন্দেহ্‌র সৃষ্টি করেছে কিংবা আমরা ভুল বুঝেছি সেটা হল, আয়াত নম্বর ২৩০ । আয়াতটা লিখছি,


তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয় বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয় । অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই, যদি আল্লাহ্‌র হুকুম বজায় রাখায় ইচ্ছা থাকে । আর এ হচ্ছে আল্লাহ্‌ কতৃক নির্ধারিত সীমা, যারা উপলদ্ধী করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয় । (২,২৩০)


এবার আসা যাক, আমরা হিল্লা বিয়ে সম্পর্কে কি জানি ? রাগের মাথায় বা বদ্‌মেজাজের কারণে, মুখে উচ্চারণ করল, এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক । ব্যস, তালাক হয়ে গেল !? আমি আগেই বলেছি, আমার কাছে কোন জিনিসটাকে তালাক মনে হয় । আমার কাছে, এইটা তালাকই না । কাজেই হিল্লা বিয়ের হওয়ার প্রশ্নই উঠে না । এরপর, পরের অংশ ব্যখ্যা করার জন্য ধরে নিলাম, এভাবে তালাক হয়ে গেল । প্রথমে, আমাদের সমাজে ঐ মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয়, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিংবা ধর্মের ভয় দেখিয়ে । এই বিয়ে তো বিয়েই না । কোন মেয়ে কিংবা কোন ছেলে খুশি মনে নিজে থেকে বিয়েতে রাজী না থাকলে সেই বিয়ে বিয়েই না । কাজেই আমাদের যে হিল্লা বিয়ে দেয়া হয়, সেটা তো বিয়েই না ! তারপর যে ছেলের সাথে বিয়ে দেয়া হয়, তার উদ্দেশ্যই থাকে শারীরিক সম্পর্ক বিষয়ক । এইটা তো পতিতালয়ে যাওয়ার সমান । আর ঐ ছেলে যদি, ঐ উদ্দেশ্যে বিয়েটা না করে বিয়ের উদ্দেশ্যেই করে এবং মেয়েটাও যদি রাজী থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই তারা ১ মাস, ২ মাস পরে তালাক নিয়ে নিবে না ! কারণ, তারা দুজন দুজনকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে । কাজেই এই দিক দিয়ে ভাবলেও হিল্লা বিয়ে জিনিসটার অস্তিত্ব নেই । আর যে বিয়ে করাই হবে, বিয়ে ভেঙ্গে ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে সেটা কি বিয়ে ??


তাহলে দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিলে প্রথম স্বামীর সাথে বিয়ে হতে পারবে, এর অর্থ কি, যেটা কোরানে আছে । ঐ বাক্যটার অর্থ হচ্ছে শুধু ঐ জায়গায় যে, একই মানুষের সাথে দ্বিতীয়বার বিয়ে হওয়াতে কোন সমস্যা নেই । শুধু এইটাই । একটা ঊদাহরণ দিয়ে বলি । ধরলাম, প্রথম স্বামীর সাথে বিয়ে ভেঙ্গেছে দশ বছর আগে । এর মাঝে সুখে শান্তিতে দ্বিতীয় স্বামীর সাথে একটা মেয়ে ঘর করল এই দশ বছর । ধরলাম, দ্বিতীয় স্বামী মারা গেল, কিংবা কোন কারণে তাদের বিয়েটা ভেঙ্গে গেল । তখন দেখল যে, প্রথম স্বামীর সাথে যে কারণে তালাক হয়েছিল সে সমস্যাটা আর নেই, আবার বিয়ে করা যায় । তখন হয়তো অনেকে বলতে পারে, এর সাথে না তোমার একবার বিয়ে হয়েছিল, না আর বিয়ে হওয়া যাবে না । এই কথা বা এই নিয়ম যেন কেউ না করে, আমার মনে হয় সেই আয়াতটার অর্থ সেটাই ।

ঐ আয়াতের অর্থ এই না যে, একজন হুট করে তিনবার তালাক ঊচ্চারণ করল, তাতে তালাক হয়ে গেল এবং তারপর ১ সপ্তাহ্‌ বা ১ মাস, অন্য একজনের সাথে নামের বিয়েতে একসাথে থাকল তারপর আবার পুরাতন জনের কাছে ফিরে আসল । কারণ, আমরা যদি বিয়ে কি, তালাক কি, কখন কিভাবে তালাক হয় ঐ জিনিসটা বুঝি, তাহলে কিভাবে বলি, আমরা যাকে হিল্লা বিয়ে বলি সেটার অস্তিত্ব ইসলামে আছে ?!